শিশুদের রুকইয়াহ
শিশুদের বদ নজর ও প্যারানরমাল সমস্যা হলে করণীয় রুকইয়াহ্ (ইসলামিক চিকিৎসা) পদ্ধতি:
রুকইয়াহ্ শুরু করার আগে কিছু জরুরি সতর্কতা:
১. বাসা বা ঘর থেকে নিচের জিনিসগুলো সরিয়ে ফেলুন:
* প্রাণীর ছবি বা মানুষের ছবি যেকোনো জায়গায় (দেয়াল, বিছানা, পর্দা, খেলনা, জামা-কাপড় ইত্যাদিতে)।
* চোখ, মুখসহ যেকোনো জীবন্ত সৃষ্টির প্রতিকৃতি।
* খেলনা পুতুল, বিশেষ করে মুখবিশিষ্ট পুতুল।
{এসব জিনিস থাকলে রহমতের ফিরিশতা ঘরে প্রবেশ করেন না, বরং জ্বিন-শয়তান প্রবেশ করে এবং সেখানে অবস্থান করতে পারে। এ কারণে এগুলো ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।}
শিশুদের রুকইয়াহ্ করার সুন্নতি নিয়ম:
পদ্ধতি:
১. বাচ্চার মাথায় হাত রেখে নিচের দোয়াগুলো পড়ুন।
২. সকাল-সন্ধ্যায় এবং প্রয়োজনে দিনে কয়েকবার পড়ে বাচ্চার গায়ে ফুঁ দিন।
৩. যদি বাচ্চা নিজে পড়ে নিতে পারে, তাহলে নিজেই নিজের মাথা বা বুকে হাত রেখে দোয়াগুলো পড়বে।
৪. পড়ার পর দুই হাতের তালুতে ফুঁ দিয়ে পুরো শরীরে হাত বুলিয়েও দিতে পারেন।
রুকইয়াহ্ দোয়া সমূহ:
১.
أُعِيْذُكُمْ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
উচ্চারণ: উ‘ঈযুকুম বিকালিমা-তিল্লাহিত্ তাম্মাহ, মিন কুল্লি শাইত্বানিন ওয়া হাাম্মাহ, ওয়া মিন কুল্লি ‘আইনিল্লাাম্মাহ।
২.
بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللَّهُ يَشْفِيكَ، بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
উচ্চারণ: বিসমিল্লা-হি আরকীক, মিন কুল্লি শাইইউ ইউ’যীক, মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও ‘আইনি হা-সিদ। আল্লাহু ইয়াশফীক, বিসমিল্লা-হি আরকীক।
৩.
بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ، وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ، وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ
উচ্চারণ: বিসমিল্লা-হি ইউবরীক, ওয়ামিন কুল্লি দা-ঈই ইয়াশফীক, ওয়ামিন শাররি হা-সিদিন ইযা-হা-সাদ, ওয়া শাররি কুল্লি যী ‘আইন।
৪.
اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ، أَذْهِبِ الْبَاسَ، اشْفِ، وَأَنْتَ الشَّافِي، لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বান্ নাস, আযহিবিল বা’স, ইশফি ওয়া আনতা আশ্ শাফি, লা শিফা’ ইল্লা শিফাউক, শিফা’ লা ইউগাদিরু সাক্বামা।
অতিরিক্তভাবে পড়বেন:
* সূরা ফাতিহা – ১ বার
* আয়াতুল কুরসী – ১ বার
* সূরা ইখলাস – ৩ বার
* সূরা ফালাক – ৩ বার
* সূরা নাস – ৩ বার
প্রতিটি দোয়া ও সূরা পড়ে বাচ্চার গায়ে ফুঁ দিবেন। প্রয়োজনে সূরা ফালাক ও নাস বারবার পড়া যাবে।
বদ নজরের গোসল :
যেভাবে গোসল করাবেন:
১. ৭টি সবুজ, সতেজ বড়ই পাতা নিন।
২. পাতাগুলো পিষে এক গ্লাস পানিতে রাখুন।
3. নিচের কুরআন-দোআসমূহ পানি দেখে দেখে পড়ুন এবং প্রতিটির পর ফুঁ দিন:
* দরূদ শরীফ
* সূরা ফাতিহা
* সূরা বাকারার কিছু অংশ (যেমন: আয়াতুল কুরসী ও শেষ দুই আয়াত)
* সূরা হুমাযাহ
* সূরা কাফিরূন
* সূরা ইখলাস
* সূরা ফালাক
* সূরা নাস
৪. পড়া শেষে পানিটা দিয়ে বাচ্চাকে গোসল করান – ৭ দিন একটানা।
এই পানি খাওয়ানো যাবে না। শুধু গোসলের জন্য ব্যবহৃত হবে।
পড়া পানির বোতল ও অলিভ অয়েল:
* ১ লিটারের পানির বোতল ও পৃথক বোতলে অলিভ অয়েলে উপরোক্ত আয়াতগুলো পড়ে ফুঁ দিন।
* পানি বাচ্চার প্রয়োজন অনুসারে পান করা/গোসল ও স্প্রে করার কাজে ব্যবহার করুন।
* অলিভ অয়েলটি দোয়া পড়ে ব্যবহার করে বাচ্চার হাতে-পায়ে, বা যেখানে ব্যথা বা সমস্যা বেশি, সেখানে মালিশ করুন।
গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:
কখনোই বাচ্চাদের সামনে জ্বিন-ভূতের গল্প, ভয়ংকর কল্পনা বা ভয় দেখিয়ে ঘুম পাড়াবেন না।
এতে শিশুর মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয় ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। বরং সাহস দিন, ভরসা দিন, আল্লাহর উপর বিশ্বাস শেখান।
আল্লাহর ইচ্ছায়, আপনার বাচ্চা সুস্থ হয়ে যাবে। ইনশাআল্লাহ।