Loading
লো চ্ছে . . .

ব্লগ বিস্তারিত

  • হোম
  • ব্লগ কবিরাজি বনাম রুকইয়াহ: ইসলামী... বিস্তারিত

কবিরাজি বনাম রুকইয়াহ: ইসলামী ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ

কর্তৃক Md. Johayer 18 Sep, 2025 04:02 AM
কবিরাজি বনাম রুকইয়াহ: ইসলামী ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ

ভূমিকা

মানুষ যখন কোনো কষ্ট, জাদু, জ্বিনের প্রভাব কিংবা অজানা রোগে ভোগে, তখন সে মুক্তির জন্য বিভিন্ন পথ খোঁজে। অনেকে কবিরাজি, তাবিজ-কবচ বা ঝাড়ফুঁকের আশ্রয় নেয়। আবার অনেকে কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশিত বৈধ পদ্ধতি রুকইয়াহ শারইয়্যাহ অবলম্বন করে। এই দুই পথের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে। এখানে আমরা তা কুরআন-সুন্নাহ ও বিজ্ঞানের আলোকে তুলনামূলকভাবে আলোচনা করব।

 

কবিরাজি: কুসংস্কারের পথ

কবিরাজি কী?
কবিরাজি বলতে বোঝানো হয়—তাবিজ-কবচ, মন্ত্র-তন্ত্র, অজানা ঝাড়ফুঁক এবং কখনো অজ্ঞাত উৎস থেকে পাওয়া ভেষজ বা ওষুধ দিয়ে রোগ নিরাময়ের চেষ্টা।

 

কবিরাজির সমস্যা:

শিরকের ঝুঁকি:
অনেক কবিরাজ জ্বিন ও শয়তানের সাহায্য নিয়ে কাজ করে। রাসূল ﷺ বলেন:

مَن عَلَّقَ تَمِيمَةً فَقَدْ أَشْرَكَ
"যে তাবিজ ঝুলালো, সে শিরক করলো।"
— (মুসনাদ আহমাদ, হাদীস 17440)

ভ্রান্ত বিশ্বাস:
কবিরাজরা দাবি করে তাবিজ বা মন্ত্রেই মুক্তি, অথচ প্রকৃত মুক্তিদাতা কেবল আল্লাহ।

বাস্তবতা:
সাময়িক মানসিক সান্ত্বনা পেলেও স্থায়ী চিকিৎসা হয় না। অনেকে নতুন রোগ ও জটিলতায় জড়িয়ে পড়ে।

 

রুকইয়াহ: কুরআন-সুন্নাহর আলোকে বৈধ চিকিৎসা

রুকইয়াহ কী?
রুকইয়াহ হলো কুরআনের আয়াত, আল্লাহর নামসমূহ এবং রাসূল ﷺ এর শিক্ষা অনুযায়ী দোয়া পড়ে রোগীর উপর ফুঁক দেওয়া বা শ্রবণ করানো।

 

রুকইয়াহর প্রমাণ কুরআনে:

আল্লাহ বলেন:

وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ
“আমি কুরআন থেকে নাজিল করি, যা মুমিনদের জন্য শিফা ও রহমত।”
— (সূরা আল-ইসরা 17:82)

 

রাসূল ﷺ এর আমল:

আয়েশা (রা.) বলেন:

كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ إِذَا اشْتَكَى نَفَثَ عَلَى نَفْسِهِ بِالْمُعَوِّذَاتِ وَمَسَحَ عَنْهُ
“রাসূল ﷺ অসুস্থ হলে, তিনি নিজে নিজের উপর মুআউইযাত (সূরা ফালাক ও সূরা নাস) পড়ে ফুঁ দিতেন এবং হাত বুলাতেন।”
— (সহীহ বুখারী: 5016, সহীহ মুসলিম: 2192)

 

 বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা:

শব্দের কম্পন (Sound Frequency):
গবেষণায় প্রমাণিত যে, কুরআনের তিলাওয়াত মানুষের ব্রেইনে আলফা ওয়েভ তৈরি করে, যা প্রশান্তি আনে ও স্ট্রেস হরমোন (Cortisol) কমায়।

(সূত্র: Journal of Religion and Health, 2017)

ইমিউন সিস্টেমে প্রভাব:
নিয়মিত কুরআন শ্রবণ ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

(সূত্র: International Journal of Psychology and Behavioral Sciences, 2018)

সাইকোথেরাপির বিকল্প:
রুকইয়াহ মানসিক থেরাপির মতো কাজ করে। রোগীর বিশ্বাস (Faith Healing), শব্দের শান্তিময় রিদম ও আত্মার তাওয়াক্কুল একসাথে রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে।

 

 কবিরাজি বনাম রুকইয়াহ: তুলনা

বিষয়কবিরাজিরুকইয়াহ
উৎসলোকাচার, মন্ত্র, জ্বিনের সাহায্যকুরআন ও সহীহ হাদীস
আক্বীদাহশিরকের ঝুঁকিখাঁটি তাওহীদ
ফলাফলসাময়িক, বিভ্রান্তি সৃষ্টিস্থায়ী, আল্লাহর ইচ্ছায় শিফা
বৈজ্ঞানিক ভিত্তিনেইশব্দ থেরাপি, সাইকোথেরাপি, ইমিউন উন্নয়ন
আত্মিক দিকশয়তানের উপর নির্ভরতাআল্লাহর উপর নির্ভরতা

 

উপসংহার

কবিরাজির পথ শয়তানের ফাঁদ, যা মানুষকে শিরক ও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। অপরদিকে রুকইয়াহ শারইয়্যাহ হলো রাসূল ﷺ এর শেখানো পদ্ধতি, যা খাঁটি তাওহীদের উপর ভিত্তি করে। কুরআন-সুন্নাহর এই চিকিৎসা পদ্ধতি শুধু আধ্যাত্মিক নয়, বরং বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত যে এটি মানুষের শরীর ও মনে প্রশান্তি আনে।

তাই আসুন, আমরা কুসংস্কার ও কবিরাজির পথ ত্যাগ করে, আল্লাহর বাণী ও রাসূল ﷺ এর সুন্নাহ অনুসারে রুকইয়াহ শারইয়্যাহর মাধ্যমেই শিফা খুঁজি।