তাবিজ/জাদুর বস্তু নষ্টের পদ্ধতি
তাবিজ বা যেকোনো ধরণের জাদু নষ্ট করার জন্য রুকইয়াহ শরঈয়াহ অনুসারে কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে।
এগুলো মূলত কুরআন ও হাদিসের নির্দেশনার ভিত্তিতে করা হয়। এখানে সংক্ষেপে শরঈ রুকইয়াহ পদ্ধতি তুলে ধরা হলো:
১. তাবিজ শনাক্তকরণ:
- যদি কারও কাছে তাবিজ বা অন্য কোনো বস্তু থাকে, যা সন্দেহজনক, তাহলে সেটি সরিয়ে ফেলতে হবে।
- তাবিজ খুলে দেখতে হবে, এতে কোনো শিরকপূর্ণ লেখা, অদ্ভুত চিহ্ন, সংখ্যা বা অজানা ভাষা আছে কি না।
২. তাবিজ ধ্বংস করার পদ্ধতি:
কাগজ, কাপড় বা চামড়ার তাবিজ হলে:
একটি পাত্রে বিশুদ্ধ পানি নিন।
এতে সুরাহ আল-ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সুরাহ আল-ইখলাস, সুরাহ আল-ফালাক ও সুরাহ আন-নাস ও জাদু সংক্রান্ত আয়াতগুলো পড়ে ফুঁ দিন।
সিহর (জাদু) সংক্রান্ত কুরআনের আয়াতসমূহ
১. সুরাহ আল-বাকারা (২:১০২)
وَاتَّبَعُوا مَا تَتْلُوا ٱلشَّيَٰطِينُ عَلَىٰ مُلْكِ سُلَيْمَٰنَ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَٰنُ وَلَٰكِنَّ ٱلشَّيَٰطِينَ كَفَرُوا۟ يُعَلِّمُونَ ٱلنَّاسَ ٱلسِّحْرَ وَمَآ أُنزِلَ عَلَى ٱلْمَلَكَيْنِ بِبَابِلَ هَٰرُوتَ وَمَٰرُوتَ ۚ وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّىٰ يَقُولَآ إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌۭ فَلَا تَكْفُرْ ۖ فَيَتَعَلَّمُونَ مِنْهُمَا مَا يُفَرِّقُونَ بِهِۦ بَيْنَ ٱلْمَرْءِ وَزَوْجِهِۦ ۚ وَمَا هُم بِضَآرِّينَ بِهِۦ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا بِإِذْنِ ٱللَّهِ ۚ وَيَتَعَلَّمُونَ مَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنفَعُهُمْ ۚ وَلَقَدْ عَلِمُوا۟ لَمَنِ ٱشْتَرَىٰهُ مَا لَهُۥ فِى ٱلْءَاخِرَةِ مِنْ خَلَٰقٍۢ ۚ وَلَبِئْسَ مَا شَرَوْا۟ بِهِۦٓ أَنفُسَهُمْ ۚ لَوْ كَانُوا۟ يَعْلَمُونَ
২. সুরাহ আল-আ‘রাফ (৭:১১৬)
قَالَ أَلْقُوا۟ ۖ فَلَمَّآ أَلْقَوْا۟ سَحَرُوٓا۟ أَعْيُنَ ٱلنَّاسِ وَٱسْتَرْهَبُوهُمْ وَجَآءُو بِسِحْرٍ عَظِيمٍۢ
৩. সুরাহ ইউনুস (১০:৭৭)
قَالَ مُوسَىٰٓ أَتَقُولُونَ لِلْحَقِّ لَمَّا جَآءَكُمْ أَسِحْرٌ هَٰذَا وَلَا يُفْلِحُ ٱلسَّٰحِرُونَ
৪. সুরাহ ইউনুস (১০:৮১-৮২)
فَلَمَّآ أَلْقَوْا۟ قَالَ مُوسَىٰ مَا جِئْتُم بِهِ ٱلسِّحْرُ إِنَّ ٱللَّهَ سَيُبْطِلُهُۥٓ ۖ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ ٱلْمُفْسِدِينَ وَيُحِقُّ ٱللَّهُ ٱلْحَقَّ بِكَلِمَٰتِهِۦ وَلَوْ كَرِهَ ٱلْمُجْرِمُونَ
৫. সুরাহ ত্বহা (২০:৬৯)
وَأَلْقِ مَا فِى يَمِينِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوٓا۟ ۖ إِنَّمَا صَنَعُوا۟ كَيْدُ سَٰحِرٍۢ ۖ وَلَا يُفْلِحُ ٱلسَّٰحِرُ حَيْثُ أَتَىٰ
এরপর তাবিজটি পানিতে রেখে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন। এতে লেখা থাকলে তা উঠে যাবে।
এরপর সেটি টুকরো টুকরো করে কেটে পানিতে ধুয়ে ফেলে দিন।
শেষ ধাপে, পানি এমন জায়গায় ফেলতে হবে যেখানে মানুষের পায়ে না লাগে।
ধাতব তাবিজ হলে:
- প্রথমে উপরোক্ত আয়াত পড়ে তাবিজের ওপর ফুঁ দিন বা পড়া পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
- এরপর হাতুড়ি দিয়ে পিষে বিকৃত করে ফেলুন অথবা পুড়িয়ে ফেলুন।
- ধাতব অংশটি মাটিতে পুঁতে দিন বা পানিতে ফেলে দিন।
৩. ব্যক্তির ওপর রুকইয়াহ করা:
- জাদুর প্রভাব থাকলে নিয়মিত সুরাহ আল-বাকারা শুনতে হবে বা পড়তে হবে।
- সকাল-সন্ধ্যার যিকর এবং বিশেষ করে আয়াতুল কুরসি নিয়মিত পড়তে হবে।
- যদি তাবিজ বা জাদুর মাধ্যমে কোনো কষ্ট হয়ে থাকে, তাহলে অভিজ্ঞ রাকীর সাহায্যে শরঈ রুকইয়াহ করতে হবে।
৪. পরবর্তী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:
- ঘর ও শরীর থেকে সব তাবিজ ও এ জাতীয় বস্তু সরিয়ে ফেলুন।
- প্রতিদিন সকাল-বিকালে তিনবার করে সুরাহ ইখলাস, ফালাক, নাস পড়ুন।
- বিছানায় শোবার আগে আয়াতুল কুরসি ও শেষ দুই আয়াত (বাকারা: 285-286) পড়ুন।
এটি বিশুদ্ধ শরঈ পদ্ধতি, যা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও সাহাবায়ে কেরাম দ্বারা প্রমাণিত। আল্লাহ যেন সবাইকে হিফাজত করেন।